জেনে নিন : ঈদের নামাজ কিভাবে আদায় করতে হয় ?


ঈদ প্রতিটি মুসলমানদের জন্য অত্যান্ত আনন্দের একটি দিন। গরিব ধনী সকল মানুষের মনে ঈদ নিয়ে আসে আনন্দ। প্রতিটি মুসলমান তাই আল্লাহর নিকট শুক্রিয়া আদায় করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে। সাধারনত একজন মুসলমান বছরের দুইটি দিন যেমন ঈদুল ফিতর অথবা ঈদুল আজহা ছাড়া এই নামাজ আদায় করে না। ফলে অনেকেই এই নামাজ আদায়ের নিয়ম ভুলে যায়।

চলুন এখন জানা যাক কিভাবে এই নামাজ আদায় করতে হয়। ঈদের নামাজ বাকি সব দুই রাকাত নামাজের মতই, তবে এই নামাজে শুধু অতিরিক্ত ৬ অথবা ১২টি তাকবীর দিতে হয়।

প্রথমে ৬ তাগবীর সম্পর্কে হাদিসে কি উল্লেখ আছে তা জেনে নেয়া যাক :

১ - ইমাম আবদুর রায্যাক রাহ. (সুফিয়ান) ছাওরী থেকে, তিনি আবু ইসহাক থেকে, তিনি আলকামা ও আসওয়াদ ইবনে ইয়াযিদ থেকে, তাঁরা ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি (ইবনে মাসউদ রা.) দুই ঈদের নামাযে ৯টি করে তাকবীর দিতেন। কুরআন পাঠের আগে ৪টি। তারপর তাকবীর দিয়ে রুকু করতেন। দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়িয়ে কুরআন পড়তেন। কুরআন পড়া শেষ হলে ৪ তাকবীর দিতেন। তারপর রুকু করতেন। (মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক - ৫৬৮৬)
২ - ইমাম তহাবী রাহ. ইবরাহীম ইবনে মারযূক থেকে, তিনি আবদুস সামাদ ইবনে আবদুল ওয়ারিছ থেকে, তিনি শুবা থেকে, তিনি কাতাদা ও খালিদ (ইবনে মেহরান) আলহায্যা থেকে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে হারিছ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি ইবনে আব্বাস রা.-এর পেছনে ঈদের নামায পড়তে গিয়ে লক্ষ করেছেন, তিনি ৪ তাকবীর দিয়ে কুরআন পড়েছেন। তারপর তাকবীর দিয়ে রুকু করেছেন। দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়িয়ে কুরআন পড়ে ৩ তাকবীর দিয়েছেন। তারপর তাকবীর দিয়ে রুকু করেছেন। (শরহু মাআনিল আছার -  ৪/৫৭০)
৩ - বিশুদ্ধ হাদীসগ্রন্থ আবু দাউদ শরীফের এ হাদীসে বলা হয়েছে যে, সাঈদ ইবনে আস রাযি. একদা আবু মূসা আশয়ারী ও হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান রাযি. কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাযে কিভাবে তাকবীর বলতেন? জবাবে আবু মূসা রাযি. বললেন জানাযার নামাযের মত প্রতি রাকাতে চার চার তাকবীর বলতেন। হুযায়ফা রাযি. সমর্থন করে বললেন আবু মূসা সত্য বলেছে। আবু মূসা রাযি. বললেন আমিও বসরা দেশে এভাবেই তাকবীর বলতাম (আবু দাউদ, ১/১৬৩ পৃ:; মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, ৪/২১৩ পৃ)


১২ তাকবীর সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ আছে এই যে,

১ - হযরত কাসীর ইবনে আব্দুল্লাহ তাহার পিতা-আব্দুল্লাহ হতে, তিনি তাহার পিতামহ (আমর ইবনে আওফ মুযানী) হতে বর্ণনা করেন যে, নবী করিম (সঃ) উভয় ঈদের নামাযেই প্রথম রাক’আতে কেরাত পাঠের পূর্বে সাতবার তাকবীর বলেছেন এবং দ্বিতীয় বা পরবর্তী রাক’আতে কেরাআত পাঠের পূর্বে পাঁচ বার তাকবীর বলেছেন (তিরমিযী, ইবনে মাযাহ ও দারেমী, মিশকাত)

২ - উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি ঈদের সালাত পড়েছেন। প্রথম রাক’আতে তিনি সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাক’আতে পাঁচ তাকবীর দিয়েছেন এবং প্রত্যেক তাকবীরে দু’ হাত উত্তোলন করেছেন (বায়হাকী, ৩য় খন্ড, ৪১২ পৃঃ)

৩ - আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সঃ) ইরশাদ করেন ঃ ঈদুল ফিতরের প্রথম রাকাআতে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকআতে পাঁচ তাকবীর এবং উভয় রাকাআতে তাকবীরের পরেই কিরাত পাঠ করতে হয় (আবু দাউদ, ২য় খন্ড, হাঃ নং-১১৫১)

৪ - হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন ঃ রাসুলুল্লাহ (সঃ) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাযের প্রথম রাক’আতে সাত এবং দ্বিতীয় রাক’আতে পাঁচবার তাকবীর বলতেন (আবু দাউদ, ২য় খন্ড, হাঃ নং-১১৪৯)

৫ - আব্দুল্লাহ বিন ফুরুখ (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন ঃ আমি উসমান (রাঃ) এর পিছনে ঈদের সালাত পড়েছি। তিনি প্রথম রাক’আতে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাক’আতে পাঁচ তাকবীর দিলেন (মুসনাদে আহম্মদ, ১ম খন্ড, ৭৩ পৃঃ)

উপরক্ত হাদিস গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় । ৬ এবং ১২ তাকবীর এর দুইটি হাদিসই গ্রহন যোগ্য।

এখন আসি নামাজ আদায়ের নিয়ম কি সেই সম্পর্কে :

প্রথম রাকাআত

তাকবিরে তাহরিমা : ঈদের নামাজে নিয়ত করে তাকবিরে তাহরিমা 'আল্লাহু আকবার' বলে হাত বাঁধা।- ছানা পড়া : 'সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়াতাআলা যাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।- অতিরক্তি ৩ তাকবির অথবা ৭ তাকবীর দেয়া। এক তাকবির থেকে আরেক তাকবিরের মধ্যে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় বিরত থাকা।
 প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেয়া এবং তৃতীয় তাকবির এ উভয় হাত বেধেঁ নেয়া।
১২ তাকবীর এর হ্মেত্রে প্রতিটি তাকবীর এর পর হাত বাধা যাবে। এই হ্মেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

 এরপর আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পড়া- সুরা ফাতেহা পড়া- সুরা মিলানো। অতপর নিয়মিত নামাজের মতো রুকু ও সেজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাআত শেষ করা।

দ্বিতীয় রাকাআত

৬ তাকবীর এর হ্মেত্রে বিসমিল্লাহ পড়া- সুরা ফাতেহা পড়া- সুরা মিলানো।- সুরা মিলানোর পর অতিরিক্ত ৩ তাকবির প্রথম রাকাআতের মতো দুই তাকবিরে উভয় হাত কাধ বরাবর উঠিয়ে ছেড়ে দেয়া অতপর তৃতীয় তাকবির দিয়ে হাত বাঁধা।
১২ তাকবীর এর হ্মেত্রে সূরা ফাতিহা পাঠের পূর্বে ৫ তাকবীর দিয়ে হাত আবার বাধতে হয়। রুকুর তাকবির দিয়ে রুকুতে যাওয়া।- সেজদা আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা

আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।

শেয়ার করে অন্যদের জানাতে ভুলবেন না।